বৃষ্টি শেষ করে আমি জ্বরে পড়লাম। ভুলেই গিয়েছিলাম, প্রচণ্ড জ্বরের কারণেই আমি ক্যাম্পাসের তুমুল আন্দোলন ফেলে বাড়ি চলে এসেছি। বাড়ির একটু বেশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসে ক্যাম্পাসে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম- এই কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। বৃষ্টিসঙ্গ কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবেই বিছানায় থাকার অজুহাত এনে দিয়েছিল। বৃষ্টি সেরে যেতেই জ্বর ঝেকে বসলো। এমন জ্বর আমার বাপের জন্মেও আসেনি। আমার পুরো ক্যাম্পাস লাইফে কেউ আমাকে এতো অসুস্থ দেখেনি। অবশ্য এটাও দেখেনি তেমন কেউ- এক মাহবুব মোর্শেদ ছাড়া।
ক্যাম্পাস থেকে যেদিন এলাম, তার আগের দিন সন্ধ্যায় মাহবুবদের সঙ্গে দেখা। মাহবুবরা মানে ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী এবং ত্যাগী নেতাদের কথা বলছি। রিকশা থেকে হলের গেটে নেমে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে কয়েকধাপ বেশি পেরুতে হবে, এই ভয়ে আমি উত্তর দিকের সিঁড়ির দিকে এগুতেই ওদের সামনে পড়ে যাই। মনিমোহন দাশগুপ্ত, আবু সাঈদ আকিজ, মাহবুব মোর্শেদ, ফারুক ওয়ারিদ প্রমুখ নেতা হলের বারান্দার বাঁধানো রেলিংয়ে বসে কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। আমার এক হাতে পাউরুটি আর কয়েকটা ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, অন্য হাতে একটা সিরাপের শিশি।
ফারুক ওয়ারিদ আমাকে ডাকলেন- 'কই থাকো সারাদিন?'
-শরীর খুব খারাপ, সারাদিন ঘুমাইছি, কিছু খাই নাই। এখন উঠে ডেইরিতে গিয়ে খেলাম আর এই ওষুধ নিয়ে আসলাম।
আমি আমার হাতের ওষুধ আর রুটি ফারুককে দেখালাম।
- ঘুমাও, রোম যখন পোড়ে নিরো তখন বাঁশি বাজায়। ক্যাম্পাসের তুমুল আন্দোলন, আর তুমি ঘুমাও!
জ্বর আর মাথা ব্যথার কারণে ফারুক ওয়ারিদের সু-সত্য প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার মাথায় আসছিলো না। ক্যাম্পাসে তুমুল আন্দোলনের সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার অপরাধবোধে আনত হয়ে আমি ধীরে ধীরে জানলার কাঁচভাঙ্গা আমার ৩২৭ নম্বরের ডেরার দিকে চলতে থাকলাম। কোনো আন্দোলন হলেই কেনো ক্ষমতাসীন দলের ছেলেরা আমাদের ঘরের জানলার কাঁচ ভাঙ্গে- এই প্রশ্নের কোনো মীমাংসা না করেই আমি তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম এবং ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিলাম।
No comments:
Post a Comment