আবুল কাশেম স্যার কেবল নবম শ্রেণীতেই জীববিজ্ঞান পড়ান। তিনি স্যুটেড বুটেড হয়ে স্কুলে আসেন; পারতপক্ষে ব্লাক বোর্ডের ধারে কাছে ঘেঁষেন না- চকের গুড়ো লেগে স্যুট টাই নোংরা হয়ে যায়।
কিন্তু আজ তিনি ক্লাসে এসেই চক নিয়ে সোজা বোর্ডে গেলেন; আমাদের দিকে দূরে থাক, নিজের জুতো-টাইয়ের দিকেও একবার তাকালেন না।
পুরো চল্লিশ মিনিট ধরে, কপালে চিক চিক ঘাম তৈরি করে আবুল কাশেম স্যার ব্লাক বোর্ডে একটি প্রাণীকোষের চিত্র আঁকলেন। প্রাণীকোষটির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে আমাদের বোঝাতে পারলেন না, কারণ বাইরে বারেক মোল্লা স্যার দাঁড়িয়ে আছেন- আবুল কাশেম স্যার পাঁচমিনিট লেট।
আমরা কেউই প্রাণীকোষটি খাতায় তুললাম না, কারণ বইয়ে, গাইডবইয়ে এর চাইতে আকর্ষণীয়, রঙিন প্রাণীকোষের ছবি এবং বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে। তাছাড়া বহু আগেই প্রাইভেট টিউটর আমাদেরকে প্রাণীকোষ চিনিয়েছে। মতিঝিল স্কুলের ছেলেমেয়েরা ক্লাসে প্রাণীকোষ বোঝার অপেক্ষায় বসে থাকে না।
স্যুট, টাই, প্যান্ট এমনকি জুতোভর্তি চকের গুড়ো নিয়ে আবুল কাশেম স্যার টিচার্স লাউঞ্জের দিকে চলে গেলেন।
বারেক মোল্লা স্যার ঝড়ের বেগে ক্লাসে ঢুকলেন, বোর্ডে গেলেন, ডাস্টার দিয়ে প্রাণীকোষ ঝেড়ে ফেললেন, চকে লিখলেন 'কপোতাক্ষ নদ', বললেন 'মাইকেল মধুসূদনই ছিলেন বাংলা ভাষার প্রথম বিদ্রোহী সাহিত্যিক......'
No comments:
Post a Comment