সারাদিনের রাজনীতি শেষ করে মধ্যরাতে ঘরে ফেরে মাহবুব মোর্শেদ। প্রচণ্ড গরমে ঘরে বসে থাকাই যখন দায়, তখন সারাটা দিন রাজনীতির উষ্ণ মাঠে দিন কাটিয়ে ঘরে কই একটু রেস্টটেস্ট নিবে, তা না করে আরেকবার জনসেবা করতে হচ্ছে মাহবুবকে। ঐ দিন ও কী কী করেছিলো ঠিক মনে নেই আমার, সম্ভবত মাথায় পানি-টানি দিয়েছিলো, নোংরা ঘরটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করেছিল, এইসব। মাহবুব ওই রাতটা আমাকে বলতে গেলে বাঁচিয়ে রাখে। সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই।
দুটি বৃষ্টির আর পাঁচটি জ্বরের রাত কাটিয়ে বাড়ি থেকে বের হই। যাত্রাপথে যাত্রাবাড়িতে থামি আমার শৈশবের বন্ধু আলমের সাথে দেখা করার জন্য। আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু কে?-এই প্রশ্নের জবাবে একসময় আমি ওর নামই বলতাম। বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী পীরের নাতি ও। কথায় কথায় আধ্যাত্মিকতা আর রহস্যময়তা রাখতে পছন্দ করতো, ভাবের চর্চাও করতো। বিষয়টা ও পেয়েছিলো পারিবারিকভাবে। এই অতি ভাব আর রহস্যময়তার কারণে শেষ পর্যন্ত নিজের প্রেমটাকেও হারাতে হয়েছে আলমকে। কিন্তু এই হারানোটাকেও মধুর করে তুলেছে "বিরহ বড়ো ভালো লাগে" টাইপের বেশভূষণ আর আচরণের মাধ্যমে। "যাকে চাইলাম তাকে পেলাম না, আর অন্য কার কাছে যাবো?"-ইত্যাদি মার্কা কথাবার্তা আরকি! অবশ্য এইসব গল্প অনেক পরের। সেদিন যখন আলমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখনও পর্যন্ত গল্পটা প্রেমের রহস্যেই ছিল, বিরহের রহস্যে ছিল না।
আলম যে মেয়েটাকে পছন্দ করতো সে থাকতো মানিকগঞ্জ। প্রায়ই 'জাফরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি' বলে বাসা থেকে বেরিয়ে বাসে চড়ে আলম ঘুমিয়ে পড়তো। সাভার-নবীন গড়*-ধামরাই পেরিয়ে সে যখন ভুলে মানিকগঞ্জ চলে আসতো, তখন তার ঘুম ভাঙ্গতো। পীরের নাতি হিসেবে এইভাবে সে মিথ্যে না বলেও নিজের প্রেমের সাথে দেখা করে আসতে পারতো। কিন্তু পীরের নাতি না হওয়ার আমাকে প্রায়ই আলমদের বাড়িতে আলমের মায়ের কাছে মিথ্যে বলতে হতো। বিষয়টা অবশ্যই ওর প্রেম এবং জাহাঙ্গীরনগর গমন।
এইবার অবশ্য আলমের না, নিজের প্রেম নিয়েই এসেছি ওর কাছে। আমার প্রেম মানে আমি যে মেয়েটির প্রেমে পড়েছি বলে আমার সঙ্গী-সাথীরা মনে করছে সেই বিষয়টি নিয়েই ওর সাথে আলাপ করতে এসেছি। কারণ বিষয়টি নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে। ঝামেলা মানে চরম অবস্থা। আমি পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারিনি। খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ প্রায়। কিন্তু ঘটনা হলো, আমি প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপরে চেপেছে। আমার সাথীরা, এমনকি ঐ মেয়েটিও ভাবছে আমি প্রেমে পড়েছি। আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো ভেঙ্গে যায় যায় অবস্থা।
* নবীন গড়-কে অনেকে ভুল করে নবীনগর লিখে থাকে।
No comments:
Post a Comment