আমি যখন প্রিমিয়ামে জাহাঙ্গীরনগর থেকে ঢাকা আসছিলাম, তখনও আমি ঘামছিলাম। আমার সহপাঠীদের কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন- গরম তো আর কম না, গাড়ির গরম, বাতাসের গরম, সূর্যের গরম, মানুষের গরম- সব মিলে গরম এত বেশি যে এসি গাড়িতেও আমাকে ঘামতে হচ্ছে।
ঢাকা থেকে রূপগঞ্জের পথে গরমে আমি কোমল পানীয় পান করতে বাধ্য হই, যার কোনো ফুড ভ্যালু নেই। এবং খেয়াতে নদী পাড় হবার সময় আমি নদীর পানিতে হাত মুখ ধুয়ে ঠাণ্ডা হতে চেষ্টা করি। এ নদীটিকে স্থানীয় লোকেরা বালু নদী বলে।
আমি যখন বাড়ি এসে পৌঁছাই, বাড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমার বোন হাতপাখা এনে দেয়। কারণ অনেকদিন ধরে এলাকায় বিদ্যুত নেই। আমি হাতপাখা নাড়ি। কিন্তু একটু পরেই থেমে যাই। ক্লান্তিতে নয়, বাড়ির চারপাশের গাছগুলো প্রচণ্ডভাবে নড়ছে, সুতরাং বইছে বাতাস প্রবলভাবে। সূর্যের নীচে প্রচুর কালো মেঘ, আমাদের মাথার ওপর- তাই সূর্যের উত্তাপ এবং আলো দুইই উধাও।
একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হলো। প্রচণ্ড বৃষ্টি। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি। আমার পিচ্চি বোনটা 'ভাইয়া দেখ মেঘ' বলে চীত্কার করতে থাকে। আমি মেঘ দেখি। দেখি থামার কোনো লক্ষণ নেই। আমরা বৃষ্টিকে অনন্ত ধরে কাজের পরিকল্পনা করি। তখন দুপুর সাড়ে তিনটাতেই ঘরে হ্যারিকেন-মোমবাতি জ্বলে ওঠে। আমি দুপুর সাড়ে তিনটাতেই দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলি, বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় থাকি না।
এবং সেই দুপুর সাড়ে তিনটাকেই আমাদের কাছে সন্ধ্যা মনে হয়। সন্ধ্যাকে মনে হয় নিশুতি।
সেই সন্ধ্যা বা রাতে আমি ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে লিখতে বসি, তবু দরজা-জানলার ফাঁক দিয়ে হুড়মুড় করে বাতাসের, পানির ঝাপটা এসে টেবিল ভিজিয়ে দেয়, হ্যারিকেন নিভিয়ে দিতে চায়।
সে রাতে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি, পরদিন সকালে আকাশ উজ্জ্বল হলে আবার লিখবো কিংবা দিনের বাকি কাজগুলো করবো ভেবে। কিন্তু সকালে দেখি বৃষ্টি ঝরছেই। বৃষ্টি ঝরতেই থাকে। আমি আবারও রাত হলে শুয়ে পড়ি। কিন্তু আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। এ প্রচণ্ড শীতে যখন আমি কম্বলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি, তখনও মশারির বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আমি লিখতে চাই। সুতরাং লেখার জন্য উঠি এবং লিখি।
তখনই একদল রংবেরংয়ের পোকা আমার হাতে, কাগজে, গায়ে এসে বসে। ওরা বাইরে থাকতো, বৃষ্টি ওদের বাইরে থাকতে দেয়নি।
No comments:
Post a Comment