এক টুকরো কাঁচ হাতে নিন। তড়িঘড়ি পকেটে ভরে ফেলুন। কাপড় কেটে বুক ছিড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়- সেক্ষেত্রে চোরা পকেটে রাখুন, সহজে হৃদপিণ্ডের নাগাল পাবে কাঁচখণ্ড। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কম; থাকলে আপনিই সবচেয়ে প্রথমে পাস করে গেলেন।
এক টুকরো কাঁচ হাতে নিন। তড়িঘড়ি লুকিয়ে ফেলুন। বাড়ি গিয়ে রূপোর কৌটোয় সযত্নে ভরে রাখুন। মাঝে মাঝে খুলে দেখবেন, মন খারাপ হলে। হতাশ, বিষন্ন, দুঃখবাদী হয়ে গেলে; আত্মহত্যা করার ইচ্ছে জাগলে; জগতের সবকিছু অর্থহীন মনে হলে কাঁচের টুকরোটি বার করে দেখবেন সূর্যের আলোয়।
এক টুকরো কাঁচ হাতে নিন। পকেট না থাকলে, লুকোতে না পারলে, তড়িঘড়ি গিলে ফেলুন। মোক্ষম সুযোগ, সর্বশেষ। চিরকালের জন্য শুদ্ধ হয়ে যাবেন। যারা মৃত্যুর ভয় দেখায়, কাঁচ মুখে পোরার আগে ওদের মুখে একদলা থু থু ছিটিয়ে নিন। কাঁচ খাওয়া মুখের থুথুর যোগ্য সবাই নয়।
এক টুকরো কাঁচ হাতে নিন। হুড়োহুড়ি করে, লুটোপুটি করে সংগ্রহ করুন। পাশের বন্ধুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে, সামনের পেছনের মানুষগুলোর হাতে পা তুলে দিয়ে সকলকে নিবৃত্ত করুন। সজোরে সবেগে সংগ্রহ করুন কাঁচখণ্ড। কাঁচের টুকরো হাতে থাকলে বজ্রমুষ্ঠি হবে আপনার। সচীত্কারে বলতে পারবেন, আমি জানবিবির সন্তান, ধর্ষক নই!
(জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীরা হলগুলোতে সর্বাত্মক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ধর্ষণকারী এবং তাদের সহযোগীদের হল থেকে বিতাড়ন করে। এই রণমিছিল চলাকালে আন্দোলনকারী ক'জন ছাত্রছাত্রী হলের তালা এবং কিছু চিহ্নিত ঘরের দরজা-জানলা ভাঙচুর করে। কেউ কেউ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের রক্তমাখা কাঁচ সংগ্রহ করেছিল। জানবিবি আমাদের মা। জানবিবির হল আমাদের প্রিয়, হলের ঘর আমাদের প্রিয়; ঘরের দরজা, জানলা, জানলার কাঁচ আমাদের প্রিয়।)
No comments:
Post a Comment