সম্প্রতি কোনো ঐতিহ্যবাহী প্রত্নস্থানে গিয়েছেন? গেলে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, স্থাপনাটির চারপাশে সারি সারি ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো। মহাস্থানগড় বলুন আর দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির-ই বলুন সবখানেই স্থাপনাটির বাফার এরিয়ার ভেতরেই আপনি হয়তো দেখেছেন, ইউক্যালিপটাস। সত্যি কথা বলতে কি, কিছু না জানলে আপনার হয়তো ভালই লাগবে- আর কিছু না, গাছ বলে কথা। ইন্টারনেটে একটু সার্চ দিলে আপনি হয়তো ইউক্যালিপটাস সম্পর্কে অনেক কথাই জেনে যাবেন। দ্রুত বর্ধনশীল এই কাঠদায়ী গাছের অর্থকরী গুণের বর্ণনায় অনেকে মুখরোচক তথ্যই আপনি পাবেন। তবে, অনেক কথাই আপনি পাবেন না। আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে কেন এই গাছের বিরুদ্ধে রীতিমতো রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে, সেই সব তথ্য অনেক কম-ই পাওয়া যায়। তবে তবু আপনি জানতে পারবেন, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার মানুষ এই গাছের বিরুদ্ধে সোচ্চার- এই গাছ তাদের সনাতন কৃষি পদ্ধতি, পরিবশ এবং সংস্কৃতির জন্য হুমকি বলে তারা মনে করে। আমাদের দেশেও ফরহাদ মজহার-রা এই গাছের বিরুদ্ধে, তাদের প্রধান যুক্তি- ওই সনাতন হারালো বলেই। রাস্তার দু'ধারে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর লাগানো ইউক্যালিপটাস, শিশু এবং অ্যাকাশিয়া বিষয়ে চিন্তার একটা সংখ্যাও বেরিয়েছিল।
আমরা প্রত্নতাত্ত্বিকরা ক্ষুদ্ধ অন্য একটি বিশেষ কারণে। এতোদিন ধরে এই গাছ আমরা কেবল রাস্তার দুই ধারেই দেখতাম, এই কাজের জন্য কয়েক বছর ধরে তারা প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপন পুরস্কার-ও পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, ঐতিহ্যবাহী প্রত্নস্থানগুলোর চারধারে এই গাছ লাগানো। সত্যি কথা বলতে কি, যে উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী এই গাছ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে গণহারে লাগাচ্ছে, সেই উদ্দেশ্যটি প্রত্নস্থানের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। সেটি হলো- পানি শোষণ। এই গাছ বিপুল পরিমাণে পানি শোষণ করে। এর ফলে এটা সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি ব্যবস্থার ওপর একটা প্রভাব ফেলে।
আর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার পাশে এই গাছ লাগালে, এটা ভূমির পানি শোষণ করে, তখন ভূমি পাশ্ববর্তী স্থাপনার মধ্যে থাকা আর্দ্রতা শোষণ করে। এর ফলে ওই স্থাপনাটি আর্দ্রতা হারিয়ে নিজের মধ্যকার দৃঢ়তা হারায়। ক্রমাগত সঙ্কোচন ও প্রসারণের ফলে ভবন বা স্থাপনাটি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ে।
এবং আমি মনে করি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী এই কাজটি ষড়যন্ত্রমূলকভাবেই করছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেশকে ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে দূরে রাখার জন্য এই রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজটি তারা করছে রাষ্ট্রকে পুরো অন্ধ রেখে। অথচ এই কাজের জন্যই তারা ফি বছর রাষ্ট্রীয় পদক পেয়ে যাচ্ছে।
যে চাষীদেরকে প্রলুব্ধ করে, ব্যাট এই গাছ লাগিয়েছে, তারা গাছগুলো কাটতে পারছে না। কারণ তাদের সাথে চুক্তি ছিল, এই গাছগুলো নির্দিষ্ট সময় আগে কাটা যাবে না এবং এই গাছের আশেপাশে কোনো দেশীয় গাছ লাগানো যাবে না। ফলে কৃষকের পক্ষে খুব একটা কিছু করা সম্ভব না। কিন্তু যারা দেশ নিয়ে ভাবেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কাজের আইনগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাদের কাছে একটা অনুরোধ, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ধ্বংসের জন্য তাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহী কাজের বিরুদ্ধে একটা কিছু করুন।
***ইউক্যালিপটাস সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। এই লিংকটি পাওয়া না গেলে আমাদের ওয়েবসাইট-টিতেও দেখতে পারেন।
No comments:
Post a Comment