Sunday, November 15, 2009

নাওযাত্রা-৩

তিন নম্বর কিস্তিটি লেখার আগে এক নম্বর কিস্তির একটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে নেই। নজরুল ভাই এবং মুস্তাফিজ ভাই জানতে চেয়েছিলেন বারিকের টিলাটি কোথায়? ভারতের মেঘালয় থেকে নামা সহ্‌ইয়ং নদীটির প্রধান শাখা জাদুকাটা বাংলাদেশে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে, ওই সীমান্তে একটি টিলা আছে, তার নাম বারকির টিলা বা বারেকের টিলা বা বারিকের টিলা। ঢাকা থেকে গেলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে তাহিরপুর, সেখান থেকে নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর পার হয়ে পৌঁছুতে হবে বারিকের টিলা। বন বিভাগের সংরক্ষিত বন এবং বিডিআর-এর চৌকি আছে এখানে। এক দিকে মেঘালয় (এই টিলাটিও মেঘালয়ের অংশ, তবে ছোট), অন্যদিকে নদী এবং জেগে ওঠা চর। আর স্বতন্ত্র সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন জৈন্তা আদিবাসীরা। সময় মতো যেতে পারলে কোনো আদিবাসী উৎসব-ও হয়তো দেখে আসতে পারবেন (যেমনটি আমরা পেরেছিলাম)। কয়েক ঘর মুসলমানও আছে, দু'এক ঘর খাসি বা অন্য আদিবাসীও পেতে পারেন। জুঁটিরা কয়েকটি জিনিস মনে রাখবেন, প্রথমত প্রায় সারা বছর বৃষ্টি হয়, সুতরাং বৃষ্টিরোধক জুতা, রেইনকোট এবং ছাতা নিয়ে যাবেন। রেইনকোট নিলেও ছাতা নেবেন, নইলে ছবি তুলতে পারবেন না। টিলায় ওঠার সময় সাবধানে উঠবেন। বনে যাবেন, যদিও অনেকেই নিষেধ করবে। নদীতে নামবেন না, ছোট নদী মনে হলেও অনেক গভীর। চরেও নামবেন না, চোরাবালি আছে নিশ্চিত, আমরা হাতে নাতে প্রমাণ পেয়েছি। অবশ্যই রোগজীবাণু প্রতিরোধক সাথে নিয়ে যাবেন।

আমার ফেসবুকের এই অ্যালবামে জাদুকাটার কয়েকটা ছবি আছে, তবে বৃষ্টির কারণে এবং ব্যাটারিতে চার্জ না থাকার কারণে বেশি ছবি তুলতে পারিনি।

নাওযাত্রা-৩
সকাল হলো বাথরুমের তাড়ায়, নৌকাটিতেই সারলাম। নাস্তা হলো না ক্ষুধা নেই বলে, গোসল করলাম মধ্যনগর থানায় (মানে পুলিশস্টেশনে)। ছবি তুললাম, একটা মাথাল কিনলাম। পার্থরা স্কুলে সমাবেশ করলো, স্কুল প্রাঙ্গনে হাজার হাজার গাছের ভেতর বৃক্ষরোপন করলো। নাটক শুরু হলো নৌকা চলতে শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই।

নৌকায় লাগানো ব্যানারের বাঁশের খুঁটির সাথে ইলেকট্রিক তারের ছোঁয়া লেগে তড়িৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি ছেলে নদীতে পড়ে গেল। আমরা ছিলাম পাশের নৌকাতেই। আমাদের নৌকানেতা জাহাঙ্গীর ভাই বাঁশ, বাঁশ বলে চেঁচাতে লাগলেন, আমি আর বিশ্ব বাঁশ খুঁজতে লাগলাম। আর আমাদের তিন উন্নয়নজীবী (ফারহাত, মর্তুজা এবং স্বপন) এবং তাদের ভাড়ায় আনা ক্যামেরাম্যান সুমন খুললেন তাদের ক্যামেরাগুলো। সবাইকে হতাশ করে, বাঁশের সাহায্য ছাড়াই ছেলেটি সাঁতরে নৌকায় উঠে এলো।

নাটকের দ্বিতীয় অংক শুরু হলো বৃষ্টি শুরু হবার পর। বৃষ্টি শুরু হলে স্বভাবতই আমি সদ্য কেনা মাথাল বের করলাম বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। ৫ সেকেন্ড বড়জোর ৬ সেকেন্ড হবে। তার বেশি এক ন্যানো সেকেন্ড-ও না। আমার মাথা থেকে মাথাল উধাও। চলে গেছে মর্তুজার হাত ঘুরে ফারহাতের মাথায়। শুরু হলো বাংলা সিনেমার বৃষ্টিভেজা নৃত্য- আমি এটা পড়ে ছবি তুলবো, আমি এটা পড়ে ছবি তুলবো। এক নায়িকা দুই নায়ক। একজন মাথায় পড়িয়ে দিলেন (যেন মাল্যদান করলেন), অন্যজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকার রেলিংয়ে ব্যাঙঝোলা হয়ে নায়িকার ছবি তুললেন।

ও, বলতে ভুলে গেছি, প্রতি নৌকাতেই তিনটি করে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ছেলেটি নদীতে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য মঞ্চস্থ হওয়ার পরপরই নায়ক-নায়িকারা কস্টিউম বদলের সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়লেন।

বাদশাগঞ্জ বাজার। সেলবরষ ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি খাদ্যগুদামের চত্বরেই অবশ্য আমাদের অবস্থান। এখানে একটা নৌকায় হাটের ছবি তুললাম। মানে নৌকা নৌকাতেই হাট বাজার। নৌকাতেই দোকান, খদ্দের-ও আসেন নৌকা করেই।

ধর্মপাশা বাজার। এখানে লোকজন অনেক দেখা গেল। কয়েকটা কামারের দোকানে কাজের ছবি তুললাম।

রাতে নৌকাতেই থাকলাম, কিঞ্চিৎ অমৃতপানের পর নাসিকা গর্জন।
(চলছে)

No comments:

Post a Comment