টুকরো জীবন : স্বপ্ননীল উপাখ্যান
শৈশবপর্ব
শৈশব, কৈশোর, বয়ঃসন্ধি এবং তারুণ্যের প্রথম দিনগুলো নিয়ে ‘আমার ছেলেবেলা’ টাইপ গদ্য বাংলা সাহিত্যে প্রচুর। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এইসব গদ্য লেখে এবং পড়ে আসলে বড়োরা। মানুষের মধ্যে কি প্রবল এক শিশু চিরকাল ঘুমিয়ে থাকে? এইসব শৈশবময় গদ্য সেইসব শিশুদের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়? কিন্তু ঘুম ভাঙিয়ে এর আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে যায় কোথায়? রূপকথার কোনো রাজ্যে? না আবহমান বাঙলার সর্ষে-মটর ক্ষেতে? কিংবা কোনো মফস্বলে? যেখান থেকে ছেলেরা প্রায়ই পালিয়ে অন্য আরেক মফস্বল শহরে ঘুরে আসে। ছেলেবেলার সব গল্পগুলোই আমাদেরকে কেবল গ্রাম, মফস্বল কিংবা অচেনা-অচেনা প্রকৃতিতে নিয়ে কেন?
এইসব প্রশ্ন আমি করি, যখন আমার বেড়ে ওঠা শহর ঢাকাতে কোনো শিশুই বেড়ে ওঠে না কোনো গদ্যে, কোনো স্মৃতিকথায়। মুক্তিযুদ্ধের পর তিরিশ বছরে ঢাকা শহরে কি একটি শিশুও বড় হয়নি? ঢাকায় কি শৈশব যাপন করেনি কেউ তিরিশ বছল? ঢাকার শিশু পার্ক, শিশু নিকেতন, শিশু মেলা, শিশু হোম, শিশু হাসপাতাল-গুলোতে গত তিরিশ বছর কারা হেসে খেলে কেঁদেছে?
নচিকেতার গানের মতো ঢাকার শিশুদের শৈশব কারা চুরি করে নিয়ে যায়? গ্রন্থকীট? সমাজ? সংস্কৃতি? অর্থনীতি?
না, তারপরেও শৈশব থাকে। টিনড্রামের অস্কার তিরিশ বছর ধরে শিশু থাকলেও তিরিশ বছর কেটে যায় এবং অভিজ্ঞতা থেকে যায়। সেইসব অভিজ্ঞতা কি এতটাই অকহতব্য যে শৈশবের ঢাকা অলিখিতপ্রায়?
এই পর্যন্ত লিখে- মনে হচ্ছে- আসলেই কি শৈশব যাপন করে কেউ ঢাকায়? বড় হওয়া আর শৈশব যাপন তো এক কথা নয়। ঢাকা শহরে, ঢাকা নগরে, ঢাকা মহানগরীতে শৈশব যাপন কি আসলেই সম্ভব? কিংবা এভাবে প্রশ্ন করা যায়- ঢাকায় কি আসলে কোনো শিশু আছে? পুঁজিবাদের কালো থাবা প্রতিটি শিশুকেও এমনভাবে চেপে ধরে আছে যে সেও ছুটছে- বাঁচতে। প্রতিদিন সকালে ঢাকার পথে পথে অজস্র শিশুকে ছুটে চলতে দেখা যায়। প্রতিটি শিশুর কাঁধে পণ্যের দুঃসহ বোঝা।
আমরা যখন শিশু ছিলাম আমরাও পাঁচ কেজি দশ কেজি পণ্যের বোঝা কাঁধে দৌড়াতাম স্কুলে। অতটা সকালে কলতলায় ভিড় থাকতো না। কিন্তু তাড়া থাকতো। হাতমুখ ধুয়ে তাড়াতাড়ি চারটে ভাত খেয়ে আমি স্কুলব্যাগ কাঁধে চাপাতাম। পাশের বাসা থেকে দোস্ত সহিদুল্লা বেরুতো হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে। ওরা শুধু খাই খাই করে, খাওয়া ছাড়া আর কোনো চিন্তা নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া, তারপর খাওয়ার জন্য ভাতের বাটি নিয়ে স্কুলের বদলে ছোটে গ্যারেজে, আরও খাবার জোগাড় করার জন্য।
পথে আমার আর সহিদুল্লার বন্ধুদের দেখা পেতাম। ওরা কেউ পড়ে, কেউ কাগজ টোকায়, কেউ ইট ভাঙে, কেউ মুদি দোকানে সহকারী, কেউ আবার গ্যারেজে-গারমেন্টে কাজ করে। প্রায় সবার হাতেই বোঝা--- পাঁচ কেজি, দশ কেজি--- হাতুড়ি, টিফিন ক্যারিয়ার, বই, কাগজের বস্তা ইত্যাদি। সহিদুল্লার গ্যারেজ, আমার স্কুল একই পথে ছিল। এই পথে অনেক গাছের মধ্যে একটি ছিল শিউলি। ভোরবেলা পথে পথে ছড়ানো শিউলি কুড়োতে আমার আনন্দ লাগে। কাগজকুড়োনো, গ্যারেজে কাজকরা ছেলেমেয়েরাও কি মনে করে সহসা শিউলি কুড়াতে শুরু করে। কাগজের বদলে শিউলি কুড়োলে কিংবা ইট ভাঙার বদলে শিউলির দল ভেঙে ফেললে আমরা স্কুলগামী বাচ্চারা বিস্মিত হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ওদের কালো কালো হাতে সাদা সাদা শিউলি দারুণ ফুটতো। সুতরাং জাত্যাভিমানে আমরা শিউলি ঝরা রাস্তা ওদেরকে ছেড়ে দিয়ে সুড়সুড় করে স্কুলে চলে যেতাম।
হুড়োহুড়ি, লুটোপুটি করতে করতে ঢুকতে চাইতাম স্কুলে, কাসে। হাতে বেত নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকতেন পিটি স্যার। লাইন করে স্কুলে ঢুকতে হতো। কাসে গিয়ে নিজের আসনে বসতাম : এটেনডেন্স হয়ে গেলে এসেম্বলি হতো- লেফট রাইট লেফট। কান্তসমস্ত হয়ে কাসে ফিরে এলে কেতাদুরস্ত স্যার আসতেন, কী সব বলতেন। পারতপে ব্লাকবোর্ডের ধারেকাছে যেতেন না- চকের গুড়ো লেগে স্যুট-টাই-জুতো নোংরা হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল। মাঝে মাঝে কোনো একদিন কাসে ঢুকেই জুতো নোংরা হয়ে যাওয়ার তোয়াক্কা না করেই সোজা ব্লাকবোর্ডে চলে যেতেন, সিদ্ধ হস্তে প্রাণীকোষের ‘চিত্র’এঁকে ফেলতেন। বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে আমাদেরকে কী বলতেন তিনিই জানেন। আমরা কেউই বোর্ডের প্রাণীকোষটি খাতায় তুলতাম না, কারণ বইয়ে, গাইডবইয়ে এর চাইতে আকর্ষণীয়, রঙিন প্রাণীকোষের ছবি এবং বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকতো। সবচেয়ে বড়ো কথা, বহু আগেই প্রাইভেট টিউটর আমাদেরকে প্রাণীকোষ চিনিয়ে দিতেন। মতিঝিল স্কুলের ছেলেমেয়েরা কাসে প্রাণীকোষ বোঝার অপেক্ষায় বসে থাকে না।
একটি কাস শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই আরেকজন স্যার ঝড়ের বেগে কাসে ঢুকতেন। তিনি হয়তো খুব ব্লাকবোর্ডপ্রিয় লোক ছিলেন। কাসে এসেই সোজা বোর্ডে গিয়ে প্রাণীকোষের চিত্র ইত্যাদি ডাস্টার দিয়ে ঝেড়ে ফেলে হিজিবিজি রেখা টানতেন, এটা সেটা লিখতেন এবং ক্রমাগত বকতেন। সহজবোধ্য কারণেই আমরা তাতে কর্ণপাত করতাম না।
এইভাবে ঢাকার উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিশুরা স্ব স্ব পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি অনুসারে বিশেষ বিশেষ স্কুলে পড়ে। কোনো কোনো স্কুলের একেকটি শিশুর মাসিক বেতন অপর স্কুলের শিশুর পরিবারের সারামাসের আয়ের চেয়েও বেশি। এসব আয়ব্যয়ের হিসাব আমরা বুঝতাম না। সকাল-বিকেল স্কুল করে, হাউজ টিউটরের কাছে পড়ে আর অতীব জরুরি জৈবিক ক্রিয়াদি করে আমাদের দিন-রাত কেটে যেতো। তবু আমরা যারা পড়াশোনা করতাম, আমাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় আসলে স্কুল। সেখানে বাবা-মা’র শাসন ছিল না, বরং একদল ক্ষুদে শয়তান ছিলো আমারি মতোন। সুতরাং যদি আনন্দ ও মজার কোনো অনুভূতি তৈরি করা যেতো, তবে তা প্রধানত স্কুলেই। এবং দুঃখময়, বিষাদের স্মৃতিগুলোও মূলত স্কুলকেন্দ্রিক।
আমার বাবা বরাবরই খুব গরীব লোক। গরীবেরা মেধাবী না হলে, স্কলারশিপ না পেলে আমার পড়াশোনা বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু তারপরেও প্রাইমারি স্কুলে আমার চেয়ে বড়োলোক সহপাঠী আমি কমই পেয়েছি। হাইস্কুলেই প্রথম গাড়ি করে আসা কোনো ছেলেকে আমার পাশে বসে কাস করতে দেখলাম। এই ছেলেরা অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতো। ফুটবল আমি চিনতাম, ক্রিকেট বুঝতাম না। পিংপং নামের অদ্ভুত খেলাটি যে কি সেটি বুঝতে আমার পাঁচ বছর লেগে যায়। নিউজপেপার নামক পণ্যটি যে প্রতিদিন প্রকাশিত হয় এবং সেটি পড়তেও হয় ঐদিনই সেটা তো কেবল সেদিন জানলাম।
আমার সহপাঠীরা নিজেদের মধ্যে কমিকস-এর বই দেয়া-নেয়া করতো। এই ‘কমিকস’ শব্দটি স্কুলগৃহের শিশুতোষ আড্ডাগুলোর প্রধান আলোচিত বিষয়। পরে অবশ্য আমি ‘তিন গোয়েন্দা’র নাম জানতে পারি। আমি শিখি কিভাবে ‘কিশোর কাসিক’গুলো না কিনেও পড়া যায়।
আমাদের বন্ধু রতন কোনো এক লাইব্রেরী থেকে ‘সেবা’র বই নিয়ে আসতো। বহু চালাচালির পর ওটি আবার ফেরৎ যেতো রতন হয়ে ঐ দোকানে। এর মধ্যে দু’টাকা করে প্রতিজনকে দিতে হতো বই পড়ার জন্যে। এইসব বই আমাদেরকে আকৃষ্ট করতো কাসের বইয়ের চেয়েও। সুতরাং একদিন যখন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আমাদের স্কুলে এসে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কথা বলে গেলেন এবং সাহিত্যের বই কাসের বইয়ের চেয়ে মূল্যবান বলে গেলেন, সেদিন আমরা হা করে শুনলাম এবং কাসের বাইরের বই পড়ার অপরাধবোধ থেকে কিছুটা মুক্তি পেলাম। কিন্তু আমাদের শিকেরা আমাদেরকে কাসে মনোযোগী করতে চাইতেন। বাবামা’র কাছে রেগুলার স্লিপ পাঠাতেন, মাঝে মাঝে বাসায় গিয়ে পড়াশোনার খোঁজ নিতেন। চেয়েও আমরা বড়ো হতে পারিনি, ছাত্র রয়ে গেছি।
আমার বন্ধুরা মাঝে মাঝে খ্যাপে যেতো। ওগুলো হলো জনসভার দর্শক হিসেবে কিংবা হরতালে পিকেটিং করতে। আমি একবার মুগদাপাড়া রেলওয়ে মাঠে খালেদা জিয়ার ‘ঐতিহাসিক বিশাল জনসভা’য় দর্শক হিসেবে গিয়েছিলাম, ওরা আমাকে লজেন্স আর পাঁচ টাকা দিয়েছিল।
১৯৮৬ সালে এরশাদ যখন রেলওয়ে হাসপাতাল উদ্বোধন করতে কমলাপুর এলো সেদিন আমরা স্কুলে এলাম স্কুলড্রেস পরে, সচরাচার যেটি পরা হয় না। স্কুল থেকে আমরা রড় রাস্তা দিয়ে হেঁটে হাসপাতালের দিকে চললাম। রাস্তায় অনেক আর্মি আর সেনাবাহিনীর গাড়ি ছিল। অবশ্য শেখ মুজিবের মরার পর থেকে সব সময়ই রাস্তায় সেনাবাহিনী থাকছে।
আমরা হাসপাতালে পৌঁছে লাইন ধরে দাঁড়ালাম। উর্দি পরা লোকেরা আমাদেরকে বললো, এরশাদের গাড়িবহর আসামাত্র আমরা যেন ‘স্বাগতম এরশাদ’ বলে চীৎকার করি। দূরে সহিদুল্লাকে দেখতে পেলাম। ওরা কয়েকজন আমাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। আমরা যখন ‘স্বাগতম এরশাদ’ বলে চীৎকার করছি, তখন ওরা এরশাদের গাড়িবহরের দিকে কয়েকটা ঢিল ছুঁড়ে পালালো। কয়েকজন আর্মি ওদের পিছনে ছুটলো।
সন্ধ্যায় সহিদুল্লার কাছে শুনলাম, আর্মিরা গুলি করে দু’জন লোক আর দু’জন টোকাই মেরেছে। এই দুই টোকাইয়ের একটা আমাদের পাড়ায় থাকতো, সহিদুল্লার সঙ্গে গ্যারেজে কাজ করতো।
রোববারে কিংবা অন্য ছুটির দিনগুলোতে মা বলতেন বাড়িতে বসে বই পড়তে আর আমরা দলবেঁধে প্রকৃতি পড়তে বেরুতাম। কমলাপুরের এক প্রান্তে ছিল গাছগাছালি সমৃদ্ধ বিশাল এক বাগানবাড়ি। তার পাশে ঝিল। লোকে বলতো বুড়ির বাগিচা। ঝিলটার নাম মতি ঝিল। কোনো এক বুড়ি স্মরণাতীত কালে এখানে বিশাল বাগান করেছিলেন; এখানে ছিল ঢাকায় দুর্লভ কমলা। ব্রাহ্মণচিরণ এলাকাটি ক্রমে ক্রমে নাম বদলে হয়ে যায় কমলাপুর, মতিঝিল, মুগদাপাড়া, মায়াকানন, সবুজবাগ, গোপীবাগ, টিকাটুলি ইত্যাদি। আর বুড়ির কমলা বাগান আর মতি ঝিল আমাদের স্বপ্নে বার বার শিশু হয়ে আসে।
কবরস্থানের পাশ ঘেঁষে কাঁচা রাস্তার পাশে টিনশেড বিল্ডিং দু’একটা, টিনের ঘর, বেড়ার ঘর আর বেশিরভাগই ফাঁকা জায়গা। জনবসতি কম থাকলেও চলার পথ ছিল সরু, কারণ রাস্তার ওপরেই কেউ হয়তো ঘর তুলে ফেলেছে। জমি কার, রাস্তা কার- ওসবের বালাই তখনও ছিল না, এখনও নেই। কমলাপুরের জমি রেলওয়ের, না সরদার পরিবারের, না জালাল মিস্ত্রীর এ নিয়ে মামলা চলছে বছরের পর বছর। আসলে এ জমি ছিল না কারো, দখলেও নেই বেশি দিন ধরে কোনো পরেই, সুতরাং মামলা- আন্ডার ড্রেনেজের কাজ বন্ধ, গ্যাসপানি লাইন বন্ধ- কেবলই বাড়ি আর বাড়ি- ডিআইটি অনুমতি দেয় কিংবা দেয় না, বাড়ি ঠিকই হয়ে যায় বছরের পর বছর। সুতরাং রাস্তাগুলো আরো সরু হয়ে যায়। বিশ বছর আগে এই সরু রাস্তার পাশে কমলাপুরের একমাত্র দোতলা বাড়ি তালুকদার বাড়ির পাশ দিয়ে আমাদের দল ডানে মোড় নিয়ে সম্পূর্ণ কাঠে তৈরি এক বিস্ময় বাড়ি অতিক্রম করতো, ওটা ছিল হাতের বাঁয়ে। ডানে ছিল সম্পূর্ণ টিনের একটা বাড়ি, তারপর বায়ে মোড় নিয়ে সরুতম গলি- যে গলি দিয়ে দুজন শিশুও পাশাপাশি হাটতে পারতো না, সেই গলি দিয়ে লম্বা একটা লাইন ধরে আমরা আবার ডানে, আবার ডানে যেতাম। সেখানে ঢাকা ব্যাটারি। ওখানে ‘বিলাই চিমটি’ পাওয়া যেতো। গাছের ফুল ও ফল চুরিতে ‘বিলাই চিমটি’ কোনো কাজে না লাগলেও ওগুলো আমাদের সঙ্গে থাকতোই। তারপর বাঁয়ে সোজা হেঁটে গেলে দারোগা বাড়ির গেট। এটাই বুড়ির বাগিচা। কোনো এক দারোগা বাগানবাড়িটি বুড়ির কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। বাড়ির গেটে কুকুর, সদা ঘেউ ঘেউ ব্যস্ত। ঘেউ ঘেউ করা কুকুর কদাচিৎ কামড়ায়- এই তত্ত্ব আমরা শিশুবেলায় ব্যবহার করতাম, কারণ পাঁচিলের ওপর আমাদের নাগাল পেতো না ঘেউ ঘেউ কুকুর। সুতরাং নিশ্চিন্তে আম, জাম, পেয়ারা নিয়ে দাড়োয়ান আসার আগেই আমরা কেটে পড়তাম পরদিনের হোমটাস্ক কমপ্লিট করতে।
হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করে স্কুলে যেতাম, ওখানে বসে করতাম কাস ওয়ার্ক কমপ্লিট। স্যার বলতেন অনুশীলনী ১৩’র ২৪ ও ২৫ নং অঙ্ক দুটো কমপ্লিট করো। আমরা c/w লেখা খাতাটা তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে বের করে দ্রুত অঙ্ক কমপ্লিট করতে চেষ্টা করতাম।
মাঝে মাঝে স্কুল ছুটির পর ফুটবল খেলা হতো। আবাহনী আর মোহামেডানে ভাগ হয়ে আমরা ফুটবল খেলা শুরু করলে মাঠের মাঝখানে দিয়ে গজ, ফিতা, চেইন নিয়ে দু’জন লোক এমাথা ওমাথার হিসেব টুকে নিতো। ক’দিন পর লোকজন আরও বাড়তো, আমাদের গোলপোস্ট ছোট হতে হতে এত ছোট হতো যে গোলকীপার হিসেবে আমাকে আর হাতে বল ধরতে দেয়া হতো না। কিছুদিন বাদে মাঠটিকে আমরা একটা চারতলা বাড়ি মনে করে আরেকটি চারতলা বাড়ির জন্য জায়গা খুঁজতাম, আমাদের খেলা শুরু হলে দু’জন লোক গজ, ফিতা, চেইন নিয়ে আসতো বাড়ির বীজ বুনতে, খেলা শেষ হবার আগেই ওখানে বেড়ে উঠতো একটা চারতলা বাড়ি গাছের মতো দ্রুত, গাছের বদলে।
No comments:
Post a Comment