Friday, February 5, 2016

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন?


জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি-এর ওয়েবসাইটে পুরস্কারের বিবরণীতে বিষয়টি উল্লেখ করা আছে।

শেখ হাসিনা পুরস্কার পেয়েছেন পলিসি লিডারশিপ ক্যাটেগরিতে। এই ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশে তিনিই প্রথম এ পুরস্কার পেলেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।

প্রশ্ন হতে পারে, পলিসি লিডারশিপে তিনি এমন কী কাজ করেছেন, যে জন্য তিনি এ পুরস্কার পেতে পারেন?
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি কতৃর্পক্ষ যে কয়েকটি অবদানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে, সেগুলো হলো-

এক. উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে;
দুই. শুধু পরিকল্পনা প্রণয়ন নয়, এটি বাস্তবায়নের জন্য ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে;
তিন. প্রতি বছরের বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের জন্য;
চার. ২০১১ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে বন ও জলাভূমি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ দশ শতাংশ বেড়ে গেছে।


জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার এমপি। কর্মপরিকল্পনাটির মুখবন্ধে তিনি লিখেছেন- ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা (নাপা) প্রণয়ন করা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। ২০০৯ সালে এর একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রণীত হলো।

২০০৮ সালে যারা কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করেন, সেই কমিটিতে ছিলেন সরকারের পক্ষ থেকে দুই যুগ্মসচিব কামার মুনীর এবং রবীন্দ্রনাথ রায়, বিআইডিএসের ড. আসাদুজ্জামান, আইইউসিএনের ড. আইনুন নিশাত, বুয়েটের অধ্যাপক রেজাউর রহমান, পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের কামরুল ইসলাম চৌধুরী, পরিবেশবিদ ড. রেজাউল করিম।
এই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পেছনে বড় একটি ভূমিকা রাখেন ড. আতিক রহমান। ২০০৮ সালে তিনি পেয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কার। ২০০৯ সালের সংশোধিত ভার্সন প্রণয়নেও (অন্যদের পাশাপাশি) তার অবদান আছে।

মজার ব্যাপার হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরস্কার প্রাপ্তির পেছনে যে বিষয়টি অনেক বেশি (সম্ভবত সবচেয়ে বেশি) অবদান রেখেছে, সেই “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা”টি যারা প্রণয়ন করলেন, গত কয়েকদিনের হাসি-গান-আলোচনায় তাদের কোনো দেখা মিললো না। এবং ভুলে গেলে চলবে না, কর্মপরিকল্পনাটি ২০০৫ সালের নাপা’র ধারাবাহিকতা। নাপা প্রণয়নে যাদের অবদান আছে, তারাও স্মর্তব্য।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার প্রাপ্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, সেটি হলো জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করা। গত ১ জুলাই ২০১৫ বাংলা ট্রিবিউনের “জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা কার পকেটে?” শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়- “অনেক আশা আর কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হলেও ব্যাপক দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থ আত্মসাতের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ গত ছয় বছরে রাজস্ব খাত থেকে এই তহবিলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৯০০ কোটি টাকা!” সূত্র:http://banglatribune.com/tribune/single/103171

যে প্রকল্পটিকে ব্যর্থ বলে সরকার নিজেই স্বীকার করছে, তার জন্য সরকারপ্রধানের পুরস্কারপ্রাপ্তিকে কী বলা যায়?
তৃতীয়ত, জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশে প্রতি বছরের বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের জন্য।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় খাতে এক হাজার ২০ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ বছরের মোট বাজেট ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার, সে হিসেবে বরাদ্দ ০.৩৩ শতাংশ, তবে মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছাড়াও আরো কয়েকটি প্রকল্প থাকতে পারে, যাতে জলবায়ু ও পরিবেশের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে মোট বরাদ্দ আধা থেকে এক শতাংশও হতে পারে, কিন্তু তাই বলে ছয়-সাত শতাংশ?

চতুর্থ ও সর্বশেষ বিষয়টি হলো, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। এ সংশোধনীর জন্য দেশবিদেশে শেখ হাসিনা নিন্দাই শুনেছেন বেশি, এবারে এ জন্য পুরস্কৃত হলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের জন্য বিখ্যাত এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদটি যুক্ত হয়। এতে বলা হয়েছে- “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।”

জাতিসংঘ বলছে, এই সংশোধনীর কার্যকরী প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১০ অনুসারে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার।

বাংলাদেশের বনভূমির হিসেব নিয়ে সরকারি তথ্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। কিন্তু সংখ্যাটি যে ক্রমাগত কমছে, এটি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। অংকে আমি একটু কাচা, তাই দশ শতাংশ বৃদ্ধির হিসেব মেলাতে পারছি না।

No comments:

Post a Comment