স্ত্রী ইলিনা সেনকে বিয়ের আগে প্রেমপত্র (আদালতের ভাষায়, “লাভ লেটার”) লেখার অভিযোগসহ ১১ টি অভিযোগে ছত্তিশগড়ের বিশেষ আদালত ডাক্তার বিনায়ক সেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। ছত্তিশগড়ে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা যা করে চলেছে, সেই তুলনায় একে সামান্যই বলা চলে। একটি ভিডিও-কে রেফারেন্স করে বিবিসি জানিয়েছে, মাওবাদীদের সাথে যোগাযোগ আছে এই অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ গ্রামের এক নারীকে গণধর্ষণের পর গলা কেটে হত্যা করেছে। বিনায়ক সেন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন তার অন্তত সেরকম কিছু হয়নি।
যদিও শেষাবধি মাওবাদীরা বিনায়ক সেনের প্রহসনমূলক শাস্তির প্রতিবাদে “প্রতিবাদসপ্তাহ” পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, কিন্তু শুরু থেকেই তাকে তাদের দলীয় কর্মী বলে স্বীকার করেনি দলটি। বিনায়ক নিজেও কখনো সেই দলের কর্মী ছিলেন না বলে দাবী করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিনায়ক একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং মানবাধিকারকর্মী। ভেলোর ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্বর্ণপদকসহ ডাক্তারি পাস করে ছত্তিশগড়ের আদিবাসী শিশু ও দুঃস্থ মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন এক হাসপাতাল। মানবতার সেবার জন্য তাকে ইউনেস্কো পদক, গ্লোবাল হেলথ কাউন্সিল এওয়ার্ড সহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা দেয়া হয়। জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী মানবতাবাদীরা যেন তার মডেলকে অনুসরণ করে এগিয়ে আসেন।
আসুন দেখা যাক, তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ করছে ভারত সরকার। বিনায়ক সেনের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি আটক মাওবাদী দার্শনিক নারায়ণ সান্যালের চিঠি কলকাতার ব্যবসায়ী পীযূষ গুহের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বিনায়ক সেন জানিয়েছেন, জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নারায়ণের সাথে দেখা করেছেন বিনায়ক। চিঠি চালাচালির কথাও স্বীকার করেছেন বিনায়ক, নারায়ণ এবং পীযূষ- তিনজনেই। তারা জানিয়েছেন, যথাযথ জেল কোড মেনেই সে চিঠি নেয়া হয়েছিলো, জেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও সীলমোহর-ও ছিল তাতে।
কিন্তু তাতে কী? নারায়ণের জেলে আটক থাকার প্রায় ১ বছর পর পুলিশ উদ্ধার করে ৩ টি চিঠি, যেগুলোতে জেল কর্তৃপক্ষের কোনো সীল নেই। পুলিশ বলেছে, এই চিঠিগুলো নারায়ণের লেখা এবং সেগুলো পাঠানো হয়েছিল পীযূষকে এবং তা বয়ে নিয়ে গেছেন বিনায়ক। এই ৩ টি চিঠি ও অভিযোগ ৩ টির কথা তিনজনেই অস্বীকার করেন। কিন্তু আদালত মেনেছেন পুলিশের অভিযোগই। যে আইনে বিনায়কের বিচার হচ্ছে, সেই বিশেষ আইনের ১০ (ক)-এর ১ ধারা মতে বিনায়কের সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা হবার কথা এই অভিযোগে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০(খ) ধারা অনুসারে, “গুরুতর” শাস্তিপ্রাপ্ত আসামীর অননুমোদিত চিঠি বহনের শাস্তি সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড।
বিনায়কের বিরুদ্ধে ২ নম্বর অভিযোগ, বিনায়ক সেন আটক মাওবাদী দার্শনিক নারায়ণ সান্যালের সাথে ৩০ দিনে ৩৩ বার দেখা করেছেন। বিনায়ক জানিয়েছেন, নারায়ণের সার্জারির ডাক্তার হিসেবে পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের স্বাক্ষরিত অনুমতি নিয়েই তিনি তার সাথে দেখা করেছেন। সেই অনুমতিপত্রও আদালতকে দেখানো হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৩ নম্বর অভিযোগ, স্ত্রী ইলিনাকে প্রেমপত্র লেখা। রাজনন্দীগাঁও থেকে পুলিশ এই চিঠি উদ্ধার করেছে। পুলিশের অভিযোগ, তাদের ব্যক্তিগত চিঠি সেখানে কিভাবে গেল? বিনায়ক সেন জানিয়েছেন, বিয়ের আগে যেহেতু তারা দু’জন দুই জায়গাতে থাকতেন, কাজেই চিঠিটি অন্যত্র পাওয়া গেছে।
৪ নম্বর অভিযোগ, ফারসগড়-এর ডাস্টবিন থেকে গোন্ডি (গোদ আদিবাসীদের ভাষা) ভাষায় লেখা কিছু ময়লা কাগজের টুকরা পাওয়া গেছে। এগুলোর কোনোটিতে বিনায়কের নাম, কোনোটিতে ইলিনার নাম, কোনোটিতে রাজেন্দ্র সায়্যালের নাম লেখা। বিনায়কের আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ডাস্টবিনের ময়লা কাগজগুলো থেকে কোনো কিছুই স্পষ্ট পড়া যাচ্ছে না, সুতরাং এই বিষয়ে তারা ডিফেন্ড করা থেকে বিরত থেকেছেন।
বিনায়কের বিরুদ্ধে ৫ নম্বর অভিযোগ হলো- বিনায়ক নারায়ণের সুস্থতা কামনা করে একটি শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়েছেন। বিনায়ক জানিয়েছেন, চিকিৎসক হিসেবে রোগীর সুস্থতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
৬ নম্বর অভিযোগ হলো- মদনলাল বারকাদে নামে জনৈক ব্যক্তি ডাকযোগে বিনায়ককে একটি চিঠি দিয়েছেন। মদনলাল তখন বিলাসপুর জেলে আটক ছিলেন, তিনি চিঠিতে জেলখানায় তার ওপর নিপীড়নের চিত্রটি বিনায়ককে জানান। বিনায়ক জানিয়েছেন, জেল থেকে কেউ তাকে চিঠি লিখলে, সে বিষয়ে তাকে কেন দোষী করা হবে? তাছাড়া জেলখানার যথাযথ অনুমোদন নিয়েই ডাকযোগে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে এবং মানবাধিকার সংস্থা পিইউসিএল-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিনায়ক সেন এই চিঠি প্রেস কনফারেন্স করে সাংবাদিকদেরকে দেখান। সুতরাং এখানে তার পক্ষ থেকে লুকোছাপার কোনো ব্যাপার ছিল না।
৭ নম্বর অভিযোগ- স্বামী তুষার কান্তি ভট্টাচার্যকে লেখা স্ত্রী সোমা সেনের চিঠি। তুষার কান্তি তখন নকশাল আন্দোলনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামী। বিনায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নকশালদের সহযোগিতা করেছেন। বিনায়ক জানিয়েছেন, খেলরন্জি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তার সংগঠন কাজ করেছে এবং তারা এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন।
বিনায়কের বিরুদ্ধে ৮ নং অভিযোগ, বিনায়ক সেন একটি কম্পিউটার ব্যবহার করেন। হাস্যকর ঠেকলেও এটাই সত্যি এবং এই ধরনের অভিযোগেই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা তার কম্পিউটারটি জব্দ করে নিয়ে যায় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায়, এর মাধ্যমে কিংবা এর মধ্যে বেআইনী কাজের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভারতীয় পুলিশ কম্পিউটারটিকেও একটি অপরাধ হিসেবে আদালতে অভিযোগ দায়ের করে।
৯ নম্বর অভিযোগ হচ্ছে, সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংবাদ বিনায়ক পত্রিকা কেটে সংরক্ষণ করেন এবং টিভির সংবাদ রেকর্ড করে সিডিতে রাখেন। বিনায়ক জানিয়েছেন, মানবাধিকার সংগঠনের এটি একটি নিত্যকার কাজ।
বিনায়কের বিরুদ্ধে ১০ নম্বর অভিযোগ পিএইচডি গবেষক অমৃতা শ্রীবাস্তব ছত্তিশগড়ে একটি ব্যাংক খোলার সময় বিনায়ক তার ইন্ট্রোডিউসার (পরিচয় দানকারী) ছিলেন। ছত্তিশগড় কিংবা ভারতের কোনো ব্যাংক থেকেই এই ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য অমৃতা শ্রীবাস্তব ২০০৫ থেকে নিখোঁজ। পুলিশের অভিযোগ সে নকশালপন্থী, বর্তমানে সে আত্মগোপনে আছে, তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
বিনায়কের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ, অমৃতা শ্রীবাস্তবের বাসা খুঁজে দেয়ার জন্য বিনায়ক সহযোগিতা করেন এবং তাকে সেই বাড়িতে ওঠান যেখানে আগে নারায়ণ সান্যাল থাকতেন। বিনায়ক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অমৃতা যে বাড়িতে থাকতেন ছত্তিশগড় পুলিশ দাবি করেছে, তারা সেই বাড়ি থেকেই নারায়ণ সান্যালকে গ্রেফতার করেছে; অন্যদিকে অন্ধ্র পুলিশ দাবি করেছে, তারা ভদ্রচলম থেকে নারায়ণ সান্যালকে গ্রেফতার করে ছত্তিশগড়ের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এ-ই। সর্বমোট ১১ টি অভিযোগ। এবং অভিযোগগুলোর প্রতিটিই প্রমাণ করা গেছে বলে আদালত মন্তব্য করেছে। সুতরাং অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
কী বলবেন?
হাসি ছাড়া কিছু বলার নেই ...
ReplyDeleteTenders And Consulting Opportunities in
Bangladesh
ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানার ছিল। আমরা অনেকে অনেক কিছুই জানি না। আপনা এই পোস্টটি দ্বারা অনেকে কিছু তথ্য জানতে পারবে।আমি আপনাকে কোন প্রকার অফার করছি না। ছোট একটি তথ্য আপনার উপকারে আসতে পারেhouse rent in dhaka mohammadpur
ReplyDeleteNice Article sir, Keep Going on... I am really impressed by read this. Thanks for sharing with us. Bangladesh National Flag Images.
ReplyDeleteআমারা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের অন্যতম প্রধান খাবার। মাছ মানে নদী থেকে ধরে আনা তাজা মাছের লাফা লাফি। আজ কাল তাজা বা টাটকা মাছ পাওয়া যাই না। ফরমালিন যুক্ত মাছ চারদিকে ছড়াছড়ি। আপনি কি তাজা ফ্রমালিন মুক্ত মাছ খোঁজ করছেন? তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.
ReplyDeleteBD Property helps connect property renters, buyers and sellers across Bangladesh, covering Dhaka, Chattogram, Sylhet, Khulna, Mymensingh, Rajshahi, Rangpur and Barisal. for more details here : Flat Rent in Dhaka
ReplyDeleteFalcon Solution ltd provide best service with best price for Epoxy resin floor coating, Epoxy floor paint in Bangladesh. for more details here : waterproofing in bangladesh
ReplyDeleteটাকা দরকার জলদি জানাবেন কত টাকা পাব মোবাইল নাম্বার01873865676
ReplyDeleteকত টাকা পাব 01403448105
ReplyDeleteআমি ও হতে চাই
ReplyDeleteAmi jodi khrishtan hote chai hote parbu..... 01775078821...... Ata amar phone number
ReplyDelete01798704772
ReplyDeleteআমি হব01798704772
ReplyDeleteআমি হব01798704772
ReplyDeleteসব মিথ্যা কথা
ReplyDeleteটাকা চাই
ReplyDelete০১৯৯৪৭০১০৫৬
ReplyDelete