তুর্কিস্তান থেকে চীনে আসা আদিবাসী উইঘুর (বানানটি উচ্চারণানুগ নয়)। মঙ্গোলিয়া এবং তিব্বতের মাঝখানে এক পাহাড়ি ভূমিতে বসবাসকারী এই জাতিটি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, তারা যোদ্ধা এবং দুদর্মনীয়। একসময় এশিয়ার বড়ো অংশ যার দখলে ছিল সেই চেঙ্গিস খাঁ এবং হালাকু খাঁ-এর বাহিনীতে তাদের জায়গা ছিল। এক কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ তুর্কিস্তান ১৯৪৯ সালে চীনা বিপ্লবের সময় চীনের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বাধীনচেতা ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই জাতিটি বর্তমানে চীনা শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য প্রতি বছর শত শত উইঘুর মানুষ প্রাণ দিচ্ছেন। আর চীন সাম্যবাদের নামে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করছে, শত শত নিহতকে প্রায়ই মাত্র ১২ জন, মাত্র ১৭ অথবা মাত্র ৫১ জন নিহত বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার করছে।
এই পর্যন্ত আমি উইঘুর জনগোষ্ঠীর পক্ষেই আছি। কিন্তু এরপর যখন দেখছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জাতিটিকে রক্ষা করার জন্য উদগ্রীব তখন ভাবতে বাধ্যই হচ্ছি, ডাল মে কুছ...। নাইন ইলেভেনের হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলার জন্য দায়ী যেসব দেশ ও সম্প্রদায়ের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে, তার মধ্যে উইঘুর-ও ছিল। উইঘুরের মুসলমানরা আমেরিকার কাছে এক অর্থে সন্ত্রাসী বলেই চিহ্নিত। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকা উইঘুরের গণতন্ত্রকামী নেত্রী রেবিয়া কাদিরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে আমার মনে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারো যদি এগুলোর জবাব জানা থাকে বলবেন।
এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী ও অশ্বেতাঙ্গ নির্যাতন দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি স্বাভাবিক ঘটনাই ছিল, এখনো তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তাহলে আমেরিকা হঠাৎ চীনের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা নিয়ে এতো উদ্গ্রীব কেন?
দুই. ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, সুদান, সোমালিয়া, বসনিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানরা যখন রোজ নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে, তখন সেই বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা খুবই ন্যাক্কারজনক, বিশেষত ইজরেলের সাথে আমেরিকার শালা-দুলাভাই সম্পর্কটা তো সর্বজন বিদিত। তো, হঠাৎ চীনের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিয়ে আমেরিকা এতো সোচ্চার কেন?
তিন. গুয়ান্তানামো কারাগার থেকে সম্প্রতি ১৭ জন উইঘুরকে মুক্তি দেয়া হয়, আরো অনেক উইঘুর গুয়ান্তানামো সহ আমেরিকার বিভিন্ন জঘন্য কারাগারে বন্দী আছে, এইসব কারাগারে উইঘুরদের (এবং অন্য বন্দীদের) ওপর যে পাশবিক (আসলে আরো জঘন্য) নির্যাতন চালানো হচ্ছে; সেই বাস্তবতা থাকার পরেও, চীন যখন রেবিয়া কাদির ও তার সহযোগীদের কারাদণ্ড দিল, তখন তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া এবং তাদের নিয়ে রীতিমতো ডকুমেন্টারি তৈরি করে, সেই ডকুমেন্টারির বিশ্বব্যাপী প্রমোশনের জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করার নিগুঢ় রহস্য কী?
চার. উইঘুর বিষয়ক চায়না ফ্যাক্ট: চীনা সরকার উইঘুর সম্প্রদায়ের স্বাতন্ত্র্য ও বিশেষ অধিকার স্বীকার করে নিয়ে নিয়ে উইঘুর অঞ্চলকে স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশেষ অঞ্চলের মর্যাদা দিয়েছে। শিনজিয়াং (অন্য বানানে জিনজিয়াং)-এর রাজধানী উরুমচি এবং অন্য শহর ও গ্রামে সুষম উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছ। শিনজিয়াং এর বর্তমান জিডিপি বাৎসরিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যার ৪৮% আসে শিল্প থেকে, জিডিপি পার ক্যাপিটা ১৯০০ ডলারের মতন। চীনের দাবি, ওই অঞ্চলের ৫০ শতাংশ মানুষ অমুসলিম এবং অধিকাংশ উইঘুর স্বাধীন দেশ চায় না। এই লিংকটিতে শিনজাং-এর রাজধানী উলুমচির থ্রিডি ম্যাপ-এর মাধ্যমে চীন সেখানে বিপুল উন্নয়নের ছবি তুলে ধরছে। চীনের এই তথ্য সত্ত্বেও আমেরিকান ইহুদি মিডিয়াগুলো যেখানে মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী বা কোন ঝামেলা খুঁজে পায়, সেখানে তাদের উইঘুরের মুসলিম প্রীতি এবং সেখানকার স্বাধীনতা নিয়ে এতো উৎকণ্ঠার কারণ কী?
এইসব প্রশ্ন নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত আছি, কারণ আমেরিকা যার বন্ধু তার কোনো শত্রুর দরকার হয় না।
No comments:
Post a Comment