Saturday, January 1, 2011

সুপ্রভাত ২০১১

খ্রিস্ট্রীয় নববর্ষ একবারই ঘটা করে পালন করেছিলাম, সেটা ২০০০ সালের প্রথম দিন। তখন সবে প্রেমে পড়েছি, কাজেই প্রেম উদযাপনেরও এক উপলক্ষ পাওয়া গিয়েছিলো। নববর্ষ টববর্ষ কিছু না, দু'জনে সারারাত একসঙ্গে থাকা- সেটিই ছিল মূল ব্যাপার। এরপর নববর্ষের খোঁজখবর আর রাখিনি। কিন্তু এবার রেখেছি। কারণ মরার ২০১০ সালটি কবে চোখের সামনে থেকে বিদেয় হবে, সেই অপেক্ষায় ছিলাম। বছরটি একেবারেই ভালো কাটেনি। বলা উচিৎ- এটি ছিল আমার জন্য দুর্ঘটনার বছর। বছরের শুরুর দিন থেকে শেষ দিন অবধি অ্যাকসিডেন্ট আর অ্যাকসিডেন্ট। অন্তত দু'বার বড়ো ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা আর তিনচারবার ছোটোখাটো, সেই সাথে ডিসেম্বরের ২৫ থেকে ৩১-এর মধ্যে ২ বার দুটি নাটকীয় দুর্ঘটনায় মনে হচ্ছে, বছরটিও আমার সাথে তার শত্রুতার ব্যাপারটি যাবার বেলাতেও ভুলতে পারেনি।

বছরের শুরুর দিন যদিও পহেলা জানুয়ারি, কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই ৩১ ডিসেম্বর রাতটিই প্রধান উপজীব্য। কাজেই ৩১ তারিখ সকাল সকাল ঢাকায় পৌঁছুতে না পারলে সবকিছুই মাটি হয়ে যাবে ভেবে ৩০ তারিখ রাতেই ঠাকুরগাঁও থেকে বাসে উঠে বসলাম। হানিফ আমার পছন্দের তালিকায় একেবারে শেষের দিকে থাকলেও টিকেট জুটলো ওই হানিফেরই। এমনিই শীতের রাত, তার ওপর কুয়াশাও ছিল প্রচণ্ড। টাঙ্গাইলের কাছে এসে সামনের এক মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দিল আমাদের গাড়ি। আমাদের গাড়িরও কিছু ক্ষতি হলো, আমি বসেছিলাম বি-১ নম্বর সীটে, কাজেই ধাক্কার কিছুটা জের আমার দেহে এসেও লাগলো। তবু ভাগ্য ভালো বলতেই হবে, কেননা আমি বাসেই ছিলাম, মাইক্রোবাসে না। দুর্ঘটনা ঘটলো এবং এরপর সেই শীতের কুয়াশাস্তীর্ণ রাতে ২/৩ ঘণ্টা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে নতুন একটি গাড়ি আসার অপেক্ষা। কাজেই ঢাকা পৌঁছে নড়াচড়া করার মতো অবস্থাও আর আমার থাকলো না, থার্টি ফার্স্ট তো দূরের কথা।

কিন্তু এই দুর্ঘটনাটিকে আমি রেখেছি "ছোটোখাটো দুর্ঘটনাসমূহ"-এর তালিকায়। বড়ো দুর্ঘটনা বলতে বোঝাতে চাই যেদিন খুলনা থেকে মধ্য রাতে বৃষ্টির মধ্যে মাওয়া হয়ে ঢাকা আসছিলাম এবং পদ্মা পেরুনোর জন্য পুলিশ ইত্যাদিদের ঘুষ দিয়ে একটি স্পীড বোটে করে নদী পেরুলাম এবং যখন সেই স্পীড বোট মাঝনদীতে এসে নদীতে পোতা কোনো খুঁটির সাথে ধাক্কা লাগিয়ে প্রায় উল্টে যায় যায়...। এই দুর্ঘটনায়ও আমার কোনো ক্ষতি হয়নি, কিন্তু এই দুর্ঘটনা আমাকে দুর্ঘটনার ভয় বিষয়ে এক গভীর ধারণা দিয়েছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, জীবনেও আর স্পীড বোটে পদ্মা পাড় হবো না।

তবে সত্যিকারের শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন আমি হই দুটি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায়। এর একটি ঢাকা এবং একটি সাতক্ষীরায়। এই দুই দুর্ঘটনায় আমার হাত/পা-এ কিঞ্চিৎ রক্তপাত ঘটে, তবে হাড়গোড় ভাঙ্গেনি এটা বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। এমনকি আমি মোটরারোহী না হয়েও বাসার সামনের রাস্তা পেরুতে গিয়ে মোটরের সামনে গিয়ে পড়বো, সেটিকে আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বিশেষ করে আমার সাথে তখন ল্যাপটপ, ক্যামেরা সহ নানা ধরনের সেনসিটিভ জিনিসপত্র ছিল। এবং মেনে নিতে পারছি না অফিসের কাচের দেয়াল কিভাবে আমি কার্টুন ছবির মতো ভেদ করে বেরিয়ে গেলাম! মানলাম, আমি খুব দ্রুত বেগে যাচ্ছিলাম এবং আমার দৃষ্টিও সামনের দিকে ছিল না, নিচে তাকিয়ে হাটছিলাম আমি। কিন্তু তাই বলে কাচ ভেদ করে কেন বেরুবো? কাচে ধাক্কা খাবো, মাথায় টাথায় ব্যথাট্যথা পাবো, কাচ ফেটেও যেতে পারে। টম এন্ড জেরির কার্টুন ছাড়া কাউকে কাচের দেয়াল ভেদ করে বের হবার কথা কেউ কি কোনোদিন শুনেছে? এই ঘটনাটিতেই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমি। আমার সারা শরীরের প্রতিটি জায়গা অর্থাৎ হাত পা গলা পেট ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় কাচেরা জায়গা করে নিয়েছিলো, আমার খুবই পছন্দের শার্ট এবং প্যান্ট কেটেকুটে চিরতরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এবং ৩১ ডিসেম্বরের ঘটনাটি তো আরো হাস্যকর। বাইজিদ ম্যাচ কোম্পানী-কুষ্টিয়ার "টু স্টার" নামে একটা দেয়াশলাই আছে, যেটি কার্বরাইজড করা হয়নি বলে আমার ধারণা, অথচ বেশি লাভের আশায় দোকানদাররা আজকাল সেটিই বেশি বিক্রি করে। সিগারেট ধরানোর জন্য যেই না আমি দেয়াশলাই বক্সে ঠুকেছি, ফট করে জ্বলন্ত বারুদ ছুটে আমার বাম চোখের ভেতর ঢুকে গেলো এবং বলা বাহুল্য, সেখানে চোখের আয়তনের অনুপাতে বড়োসড়ো এক গর্তের সৃষ্টি হলো- একেবারে ফায়ারহোল যাকে বলে। ২০১০ সালটি যদি আমার সাথে শত্রুতাই না করবে, তবে কেন এই হাস্যকর কিন্তু জঘন্য একটি দুর্ঘটনাটি দিয়ে আমাকে বছর শেষ করতে হবে?

No comments:

Post a Comment